তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নপূরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ দেশ অদম্য গতিতে এগিয়ে চলেছে। স্বাধীনতা বিরোধী সব অপশক্তিকে নস্যাৎ করে দেশকে আমরা সেই স্বপ্নের ঠিকানায় নিয়ে যাবো।
রোববার (২৬ মার্চ ) বিকেলে রাজধানীর গুলিস্তানে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০২২ উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এসময় বক্তব্য রাখেন।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ষাটের দশকে নয় বরং পাকিস্তান সৃষ্টির পরপরই উপলব্ধি করেছিলেন যে, পাকিস্তান রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বাঙালিদের মুক্তি নেই বরং আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ঐতিহ্য সমস্ত কিছু হুমকির সম্মুখীন। তাই ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস ১৪ আগস্টের আগে ১২ আগস্ট বিবৃতিতে তরুণ শেখ মুজিব পাকিস্তানের প্রথম স্বাধীনতা দিবস ১৪ আগস্টকে শুধু আনন্দ-উল্লাসের নয় বরং পশ্চিমাদের নাগপাশ থেকে মুক্তির শপথ নেয়ার দিন হিসেবে পালনের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তারপর দীর্ঘ সংগ্রামের পথ বেয়ে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখ লাখ মানুষের সভায় বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণাই করে দিয়েছিলেন, শুধু বলেননি বাংলাদেশ স্বাধীন। পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই থেকে কেন্দ্রে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছিলো যে- চতুর শেখ মুজিব কার্যত পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করে দিয়েছেন, কিন্তু আমাদের চেয়ে থাকা ছাড়া করার কিছুই নেই।’
‘পাকিস্তানি বাহিনী যখন বাংলাদেশে পিলখানা থেকে শুরু করে ঢাকা শহরে গণহত্যা চালায়, তখন ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন এবং সেই স্বাধীনতার ঘোষণা ইপিআরের ওয়ারলেসে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে’ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এবিসি নিউজে ১৯৭১ সালে ২৬ মার্চ তারিখে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার কথা উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। এভাবে বিশ্বের শত শত পত্রপত্রিকা ও গণমাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাটি প্রকাশ ও প্রচার করা হয়। ২৬ মার্চ ইয়াহিয়া খান বলেন- শেখ মুজিব বিশ্বাসঘাতকতা করেছে! তিনি বঙ্গবন্ধুকে, আওয়ামী লীগকে দোষারোপ করেন।’
ইতিহাসের দিকে নতুন প্রজন্মের দৃষ্টি আকর্ষণ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্র করতে চেয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে যখন হত্যা করা হয় তখন দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিলো ৯.৫ শতাংশ। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে ১০-১৫ বছরের মাথায় বাংলাদেশ একটি উন্নত রাষ্ট্র হতো। বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে আজ আমরা ৮ শতাংশ পর্যন্ত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হার অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। যে বছর বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয় সে বছর ১০ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন হয়েছিলো। ঝড়-বন্যা-জলোচ্ছ্বাস হলে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে সেকারণে খাদ্যে উদ্বৃত্তে হলেও বঙ্গবন্ধু সেটি ঘোষণা করেননি।’
আজকে বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণের পথে আমরা অদ্যম গতিতে এগিয়ে চলেছি, বলেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজকে খাদ্যে উদ্বৃত্তের দেশ। ১৬ কোটি মানুষের সর্বনিম্ন মাথাপিছু কৃষি জমির দেশ আজ বিশ্বে ধান উৎপাদনে তৃতীয়, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে তৃতীয়, আলু উৎপাদনে সপ্তম। এটি কোনো জাদুর কারণে হয়নি, বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার জাদুকরি নেতৃত্বের কারণেই হয়েছে।
এই উন্নয়ন অগ্রগতি অনেকের সহ্য হয় না উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘যারা পাকিস্তানের সাথে রাজনীতি করে, যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি করে, যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রিসভায় বসায়, যুদ্ধাপরাধী যারা এই পতাকা চায়নি, তাদের গাড়িতে এই পতাকা লাগিয়ে দেয়, সেটি বিএনপি-জামাত এবং এই অগ্রগতি তাদের পছন্দ হয় না। তাই আজকের এই দিনে আমাদের শপথ হবে স্বাধীনতার সব অপশক্তিকে নস্যাৎ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণের ঠিকানায় দেশকে নিয়ে যাওয়া।’