মুবিন বিন সোলাইমান,
কিশোরদের নিয়ে গড়ে ওঠা ভয়ঙ্কর আতঙ্কের নাম ‘কিশোর গ্যাং’ রাঙ্গুনিয়া উপজেলা সরফভাটা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডে অপরাধ সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছে।
গত ২০ই আগস্ট শনিবার ২০২২ইং সকালে ‘কিশোর গ্যাং’ এর উদ্যোগে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা সরফভাটা ইউনিয়নে ৮ নং ওয়ার্ডের নদীতে নৌকার উপর অশ্লীল উলঙ্গ নর্তকী দিয়ে উচ্চ শব্দে DJ গান বাজিয়ে বেগম জিয়ার জন্মবার্ষিকী পালন করেন কিশোর গ্যাং।
এতে নদীর পাড়ে গণবসতিপূর্ণ এলাকার জনসাধারণ অতিষ্ঠ হয়ে দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানা পুলিশকে জানায়। দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার পুলিশ এসআই নুরুদ্দীন তাৎক্ষণিক উপস্থিত হয়ে এর ব্যবস্থা নেন এবং মুচলেহা দিয়ে ছেড়ে দেয়।
পুলিশ চলে যাওয়ার পরে তারা আবার শুরু করে দেয় অশ্লীলতা, কর্ণফুলী নদীতে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে সন্ধ্যায় ফিরে, এলাকাতে সকালে পুলিশ আসাতে ‘কিশোর গ্যাং’ এর প্রধান বেলালের নেতৃত্বে অন্যতম সহযোগী ইফতেখার সহ ১৫-২০জনকে নিয়ে একই এলাকার হাফেজ স্টোর দোকানে সশস্ত্র লাঠি সোটা নিয়ে হামলার উদ্দেশ্যে অবস্থান নেয়।
উল্লেখ্য, এই ‘কিশোর গ্যাং’ সরফভাটা ইউনিয়ন ৮নং ওয়ার্ডে বিভিন্ন বাড়ী হতে, মূল্যবান স্বর্ণালংকার, মোবাইল ফোন, পানির পাম্প মোটর, সাইকেল, মোটর সাইকেল, ও বিভিন্ন প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী চুরি করে বিক্রির টাকা দিয়ে ইয়াবা, মাদক সেবন, ইভটিজিং ও ধর্ষণ সহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে ইতোমধ্যে।
এলাকার কেউ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে ঐ পরিবারের সকলকে মারধরের ঘটনাও ঘটেছে, তাই কেউ তাদের বিরুদ্ধে কোন কিছু বলার সাহস পায় না।
‘কিশোর গ্যাং’ নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত নিউজ করার কারণে একই এলাকার জাতীয় দৈনিক আজকালের সংবাদের চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রধান সাংবাদিক মুবিন বিন সোলাইমানকে হামলা করার উদ্দেশ্যে বাড়ির আশেপাশে টহল দিতে থাকে রাত দুইটা পর্যন্ত।
সাংবাদিক মুবিন বিন সোলাইমান হাফেজ স্টোরে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরা হতে ভিডিও ফুটেজ নিয়ে ‘কিশোর গ্যাং’ এর প্রধান বেলাল, সেকেন্ড ইন কমান্ড ইফতিখার, সাহেদ, খলিল, তানবীর, হৃদয়, আরাফাত, গুরোয়ে সহ আরো উল্লেখযোগ্য কয়েকজনের নামে দিয়ে দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
এইদিকে, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউল গনি ওসমানী ‘কিশোর গ্যাং’ সম্পর্কে মুঠোফোনে জানান, সরকার ইতিমধ্যে ‘কিশোর গ্যাং’ চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জন্য বিভিন্ন আইনি পদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন।
তিনি আরো জানান, সরফভাটার ‘কিশোর গ্যাং’ এর ব্যাপারে আমি দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি ওবায়দুল ইসলামকে জানাবো এবং এর দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার হবে।
দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি ওবায়দুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, তদন্ত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অভিযুক্তদের খুব শীঘ্রই এরেস্ট করা হবে।
সরফভাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী মুঠোফোনে জানান, সরফভাটা ইউনিয়নে যে ওয়ার্ডে হোক না কেন ‘কিশোর গ্যাং’ কে প্রতিহত করে এর শিকড় নির্মূল করতে হবে।
তিনি আরো জানান, ‘কিশোর গ্যাং’ এর চিহ্নিত বেলাল ও ইফতিখার এবং অন্যান্যদের সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, এবং তদন্তের মাধ্যমে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
সরফভাটা ইউনিয়নে ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ সাইফুদ্দিন আজাম মুঠোফোনে জানান, অভিযোগ অনিত কিশোরদের সম্পর্কে তিনি জানেন এবং প্রশাসনের সাথে সহযোগিতা করে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে শাস্তির আওতায় আনার আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, সারা দেশে কিশোর গ্যাং কালচার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোররা ব্যবহৃত হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের অপরাধের ধরনও পাল্টে যাচ্ছে।
এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, চুরি-ছিনতাই থেকে শুরু করে খুনাখুনিসহ নানা অপরাধে কিশোর-তরুণরা জড়িয়ে পড়ছে। মাদক ব্যবসা ও দখলবাজিতেও তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে।
কিশোর গ্যাং কালচারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা পর্যায়ক্রমে আলাদা আলাদা গ্রুপ তৈরি করে। তাদের ড্রেস কোড থাকে, আলাদা হেয়ার স্টাইল থাকে, তাদের চালচলনও ভিন্ন। তারা এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে। তারা নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। নানাভাবে তারা অর্থ সংস্থানের চেষ্টা করে। এলাকার কোনো ‘বড় ভাই’র সহযোগী শক্তি হিসেবেও তারা কাজ করে।
সারা দেশে গত ২ বছরে আনুমানিক ৩৪ জন খুন হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এসব ঘটনায় চার শতাধিক কিশোরকে আসামি করা হয়েছে।
নানা অপরাধে জড়িয়ে কিশোররা ক্রমেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। অধিকাংশ কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠার পেছনে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা মদদ দিচ্ছে। ‘হিরোইজম’ প্রকাশ করতেও পাড়া-মহল্লায় কিশোর গ্যাং গড়ে উঠছে।
এক সূত্র র্যাব জানায়, ২০১৭ থেকে ২০২০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত র্যাবের হাতে ২৯২ জন কিশোর অপরাধী গ্রেফতার হয়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভাসমান ছিনতাইকারীদের বড় অংশই কিশোর। তারা শুধু ছিনতাই নয়- ডাকাতি, মাদক ও চাঁদাবাজির সঙ্গেও জড়িত।