নিউজ ডেস্ক: তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ১১ জুন একটি ঐতিহাসিক দিন। ২০০৮ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘ ১১ মাস কারাভোগের পর মুক্তি লাভ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্রকে বন্দি করার জন্য, গণতন্ত্রের পায়ে শেকল পরানোর জন্যই বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ২০০৭ সালে ১৬ জুন গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো। সুতরাং আজকের এই দিনটি শুধু ব্যক্তি জননেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তি দিবস নয়, গণতন্ত্রের মুক্তি দিবস।’
রোববার (১১ জুন) দুপুরে সচিবালয়ে প্রেস ইনস্টিটিউট অভ বাংলাদেশ (পিআইবি) প্রকাশিত ‘সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু : জুলিও কুরি ও এশীয় শান্তি সম্মেলন’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ফারুক আহমেদ, পিআইবি’র মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ, সহযোগী সম্পাদক এ কে এম শামসুদ্দিন, গ্রন্থকার ও গবেষক পপি দেবী থাপা প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, ‘তখন বিএনপি-জামাতের দু:শাসন, অপরাজনীতি, তাদের নেতৃত্বে জঙ্গিদের উত্থান, দুর্নীতির সর্বগ্রাসী বিস্তার, পরপর দেশ দুর্নীেিতর পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার প্রেক্ষাপটে সেনা সমর্থিত তত্ত¡াবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলো। স্বাভাবিক ধারণা ছিলো যে যাদের দু:শাসনের কারণে ক্ষমতায় এসেছিলো বলেছিলো, তাদের বিরুদ্ধেই তারা ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু তারা প্রথমে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করে, পরে খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করে। খালেদা জিয়াকে তারা প্রথমে গ্রেপ্তার করে নাই।’
‘সেনা সমর্থিত সেই সরকার দুর্নীতি দু:শাসনের বিরুদ্ধে কথা বলে ক্ষমতা দখল করলেও নিজেরাই দুর্নীতি, অপশাসনে লিপ্ত হয়েছিলো এবং তখন তাদের বিরুদ্ধে সাহস করে কেউ কথা বলেনি, জননেত্রী শেখ হাসিনাই সাহস করে কথা বলেছেন’ উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘সেই কারণে জননেত্রী শেখ হাসিনার মুখ স্তব্ধ করার জন্য তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো। এরপর তারা বুঝতে পেরেছিলো, মুক্ত শেখ হাসিনার চেয়ে বন্দি শেখ হাসিনা কম শক্তিশালী নন, বরং অনেক ক্ষেত্রে অনেক বেশি শক্তিশালী। কারণ আমাদের দলের নেতাকর্মীরা সেই সময়কার সরকারের বিরুদ্ধে যেভাবে রাজপথে নেমেছিলো, সোচ্চার হয়েছিলো, সেই কারণেই তারা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ২০০৮ সালের ১১ জুন মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিলো।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তাই আজকের এই দিনটি ব্যক্তি জননেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তি দিবস শুধু নয়, গণতন্ত্রের মুক্তি দিবস এবং এই দিনে জননেত্রীর প্রতি অভিনন্দন, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। একই সাথে যারা জননেত্রীর মুক্তি আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলো তাদের প্রতি অভিনন্দন। অনেকেই জননেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তি আন্দোলনে শামিল হতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আজকের এই দিনে যদি জননেত্রী শেখ হাসিনা মুক্তি লাভ না করতেন, তাহলে আমাদের দেশের পরিস্থিতি পাকিস্তান কিম্বা তার চেয়েও খারাপ হতো। আজকের এই গণতন্ত্রের অভিযাত্রা অব্যাহত থাকুক।’
মোড়ক উন্মোচিত ‘সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু : জুলিও কুরি ও এশীয় শান্তি সম্মেলন’ গ্রন্থটি প্রকাশের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী পিআইবি’কে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘পিআইবি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয় সে সময়ের বিশ্ব প্রেক্ষাপটে শুধু একটি জাতির জন্ম নয়, একটি জাতির জন্মের বিস্ফোরণ ছিলো। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ যেমন স্বাধীনতা অর্জন করেছিলো পাশাপাশি বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। সেই কারণেই তাকে ১৯৭৩ সালে জুলিও কুরি শান্তি পদকে ভূষিত করা হয়েছিলো।’
সেই সময়কার প্রেক্ষাপট, সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদসহ সেই বিষয়গুলোকে একটি পুস্তকের মধ্যে আবদ্ধ করে ইতিহাসকে সংরক্ষণ এবং সেই প্রেক্ষাপটে জাতির পিতার ভূমিকা জানার ক্ষেত্রে এই বইটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, বলেন ড. হাছান মাহমুদ।
সাংবাদিকরা এ সময় গত শনিবার রাজধানীতে জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশ নিয়ে প্রশ্ন করলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘জামাত এখনো যেহেতু নিষিদ্ধ হয় নাই, রাজনৈতিক দল হিসেবে আবেদন করেছে, সে জন্য তাদেরকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে গতকাল তাদের সমাবেশ থেকে আস্ফালন করে যেভাবে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, এগুলো আসলে বিএনপিরই বক্তব্য। ২০১৪ সালে তারা যেভাবে নির্বাচন প্রতিহত করতে গিয়ে শতশত মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছিলো, সেটারই ইঙ্গিত তারা দিয়েছে। বিএনপি জোটের প্রধান শরিক জামাতকে দিয়ে তারা এই কথাগুলো বলিয়েছে। তাদেরকে সুযোগ দিলে তারা কি করতে পারে সেটি তাদের বক্তব্যে পরিস্কার হয়েছে।’