
হঠাৎ কেন তাসের ঘরের মত ভেঙে চুরমার হয়ে গেল নুর ও রেজা কিবরিয়ার সাধের অধিকার পরিষদ? কিছুদিন আগে গণতন্ত্র মঞ্চ থেকে বেরিয়ে গিয়ে নুর জানান দিয়েছিলেন এককভাবে কর্মসূচি করবেন, নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবেন, সারাদেশে কমিটি দেয়া শেষ পর্যায়ে। নুর ও রেজার দ্বন্দ্বে শেষ পর্যন্ত ভেঙে গেল সেই সংগঠন।
কোটা আন্দোলন থেকে জন্ম নেয়া গণঅধিকার পরিষদ এ পর্যন্ত বহুবার ভেঙেছে নুরের আর্থিক অনিয়ম ও নারী বিষয়ক কারণে। কয়েকমাস আগে রেজা কিবরিয়া যুক্তরাজ্যে বিএনপির পলাতক নেতা তারেক রহমানের সাথে সাক্ষাতের পর তুরস্ক যান। সেখানে জামায়াতের কয়েকজন নেতা ও আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের সাথে তার গোপন বৈঠক হয়। বড় একটা ফান্ডও পান। আবার অন্যদিকে তারেক রহমানের মধ্যস্ততায় ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্ট মেন্দি এন সাফাদির সাথে দুবাইতে বৈঠক করেন নুর। লজিস্টিকস সাপোর্ট ও ফান্ড ম্যানেজ করতেই নুরকে পাঠানো হয়েছিল, যা পরে তারেকের সাথে সাফাদির ফাঁস হওয়া ভিডিও বার্তায় জানা যায়।
রেজা ও নুর পৃথকভাবে ফান্ড সংগ্রহে যান তারেক রহমানের নির্দেশে। সেই সফরেই এজেন্ডা বহির্ভূত আরেকটি কাজ করেন নুর। প্রবাসী অধিকার পরিষদের কমিটি দেয়ার নামে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ থেকে সংগ্রহ করেন বড় অঙ্কের অর্থ। এমনকি এক মিটিংয়ে তাকে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী বলে পরিচয়ও করিয়ে দেয়া হয়। নিজেকে বিরাট হনু ভেবে নুর ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়ার চিন্তা করেন। বিএনপির সিনিয়র নেতাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেতে থাকেন, সভা-সমাবেশে বেশি কাভারেজ দাবি করেন, বিএনপি ও শরিকদের সিনিয়র নেতাদের আগে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ দাবি করেন। কিন্তু বিএনপি নেতারা এমন ঔদ্ধত্য মেনে নেননি। ফলে গণতন্ত্র মঞ্চ থেকে নুরকে সরে দাঁড়াতে হয়।
নুরের কর্মকাণ্ড রেজার পছন্দ হচ্ছিল না। সংগঠনের ভবিষ্যৎ অন্ধকার বুঝতে পেরে তিনি নিজে হেফাজতে ইসলামের তাত্ত্বিক গুরু ফরহাদ মজহার ও বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা শওকত মাহমুদের সংগঠন ইনসাফ কমিটির সাথে যুক্ত হন। কমিটিতে নিজের একটা পজিশন তৈরি করতে তুরস্ক থেকে পাওয়া অর্থের একটা অংশ ফান্ডে দেন রেজা। যা নুর জেনে যায়। মোসাদের সাথে মিটিং এর পর কালো ব্যাগে করে বিশাল ক্যাশ নিয়ে বেড়িয়ে আসে নুর। নুর মোসাদ ও প্রবাসী পরিষদের কমিটি বাণিজ্যের টাকাগুলো ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতে শুরু করেন।
মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে কিছু প্রোপার্টি কেনা ও বিনিয়োগের তথ্য ফাঁস হয়ে যায়। এ নিয়ে সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে দেখা দেয় অসন্তোষ। এক পর্যায়ে রেজা ও নুরকে একসাথে বৈঠকে বসার দাবি ওঠে। পরে ১৮ই জুন সন্ধ্যায় রেজা কিবরিয়ার মালিকানাধীন গুলশান-২ এর ৫৫ রোডস্থ ২০নং-এ বিলাসবহুল বাড়ির ছাদে সভা বসে। বৈঠকে নুরের কাছে রেজা দলের তহবিলের খোঁজ নেন, এতে নুর রেগে গিয়ে জঘন্য আচরণ করেন। তহবিল বিষয়ে নুর প্রশ্নের জবাব না দিয়ে উল্টো রেজাকে কৈফিয়ত তলব করেন কেন রেজা ইনসাফ কমিটির ফান্ডে টাকা দিলেন, কেন সেখানে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতাদের সাথে মাখামাখি করছেন- ইত্যাদি। রেজাও ছেড়ে দেননি, তিনি সংগঠনের ব্যর্থতা ও জনসস্পৃক্ততা হারানোর দায় চাপান নুরের ওপর।
ইসলামবিরোধী সাফাদি ও বাংলাদেশে হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়া শিপন কুমার বসুর সাথে সম্পর্কের কারণে দেশের ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষ নুরকে আর বিশ্বাস করে না- রেজার এসব কথা নিয়ে বাকবিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে হাতাহাতির পরিস্থিতি তৈরি হলে রেজা ছাদ থেকে নেমে যান মিটিং মূলতুবি রেখে।
এ বিষয়ে রেজা কিবরিয়া অনেক গোপন তথ্য ফাঁস করে দেন গণমাধ্যমকে। বলেছেন- নুরের আর্থিক অনিয়ম ধামাচাপা দিতে সে আমার ইনসাফ কমিটিতে যোগ দেয়ার কথা তুলেছে। ওর নামে অনেক অপকর্মের অভিযোগ আছে। বিদেশ থেকে আসা ফান্ডের কোনো হিসাব নুর কাউকে দেয় না। প্রবাসীদের কমিটি বাণিজ্যের টাকার হদিসও পাওয়া যায়নি। সে নিজেই নিজেকে উপদেষ্টা বানিয়েছে সেই কমিটির। সাফাদির সাথে নুরের বৈঠকের দিন অধিকার পরিষদের প্রবাসী নেতারাই তাকে গাড়িতে করে নিয়ে গিয়েছিলো। বৈঠক শেষে সাফাদির কাছ থেকে একটা কালো ব্যাগ নিয়ে ফিরেছে নুর। তাতে কী ছিল, কাউকে জানায়নি সে, মিটিংয়ে কী কথা হয়েছে, তাও জানায়নি।
শিপন বসুর সঙ্গে বৈঠক করে নুর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কাজ করেছে। রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী নিয়ে তারা পৃথক হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণা করেছে। এর পৃষ্ঠপোষক সাফাদি। নুর কেন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে কাজ করছে? কীসের লোভে? আমি নুরের এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন করায় সে আমাকে সরকারের এজেন্ট বানিয়ে দিল। অথচ আমি সরকারের বিরুদ্ধেই কাজ করছি। আমার কাছে বরং ওকেই সরকারি এজেন্ট মনে হচ্ছে। নুর আমাকে হুকুম দেবে, এটা চলবে না। আমাকে নিয়ে যে ধরনের প্রশ্ন করেছে, তা খুবই বাজে ও অসম্মানজনক। এসব লোকের সঙ্গে আমি কাজ করতে চাই না। ওর সাথে সংগঠনের একটা অংশ জড়িত, কারণ তারা টাকা-পয়সা, সুযোগ-সুবিধা পায়।
আবার অন্যদিকে নুরের দাবি, রেজা কিবরিয়া সরকারি দলের এজেন্ট। তাকে মাসে ৩ লাখ টাকা দেয়া হয়। ইনসাফ কমিটিকে ফান্ডিং করছে সিআইএ’র এজেন্ট মাসুদ করিম। রেজা তার সাথে সম্পৃক্ত। তারা গোপনে ব্যাংকক, কাঠমান্ডুসহ অনেক জায়গায় বৈঠক করেছেন। তারা রেজা কিবরিয়াকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার লোভ দেখিয়েছে। তিনি সেই লোভের ফাঁদে পা দিয়েছেন। তাই তিনি গণঅধিকার পরিষদও ভাঙতে চান, যেভাবে গণফোরাম ভেঙে দিয়েছেন। গণঅধিকার আমার নিয়ন্ত্রণে, এটা রেজার সহ্য হচ্ছে না। এজন্য তিনি আমার বিরুদ্ধে লেগেছেন। টাকা-পয়সা নিয়ে অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন। আমি সংগঠনের কোনো টাকা লুটপাট করিনি।
রেজা-নুরের এই দ্বন্দ্বে অনেকের মুখোশ খুলে গেছে। জানা গেল, গণঅধিকার পরিষদটি দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, সংগঠনের প্রধান দুই নেতাও দেশবিরোধীদের সাথে হাত মিলিয়েছেন নিজেদের পকেট ভারী করতে এবং দেশ ও জনগণের ক্ষতি করতে। রেজা হাত মিলিয়েছেন সিআইএ এজেন্টদের সাথে। অন্যদিকে নুর হাত মিলিয়েছেন মোসাদ এজেন্ট সাফাদি ও বাংলাদেশের ভেতরে উগ্র হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখা শিপন কুমার বসুর সাথে। অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে ষড়যন্ত্র করে যাওয়া এই কুচক্রীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনার পাশাপাশি সামাজিকভাবে প্রতিহত করা হোক।
তথ্যসুত্র:বাংলাদেশ টাইমস