আজ জিলহজ মাসের শেষ দিন। ধনী-গরিব প্রত্যেক মুসলমানের কোরবানির প্রস্তুতি আজ থেকেই শুরু। আমরা জানি, কোরবানি একটি আর্থিক ইবাদত। ১০ থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কারো কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলেই তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব; যার বিনিময়ে মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের অগণিত সওয়াব প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন।
তাই কারো কারো মনে হতে পারে, এটি শুধু ধনীদের ঈদ। আর্থিকভাবে অসচ্ছলরা তো কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য রাখে না। তারা এই সওয়াব কিভাবে অর্জন করবে? মহান আল্লাহ এতটাই দয়ালু যে তিনি ধনী-গরিব সবার জন্যই কোরবানির সওয়াব লাভের সুব্যবস্থা রেখেছেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) উম্মতকে জিলহজ মাসের চাঁদ ওঠার আগ থেকে প্রস্তুতি নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। যদি কেউ সে অনুযায়ী আমল করে, তবে সেও কোরবানির পূর্ণ বরকত অর্জন করতে পারবে। তা হলো, জিলহজের চাঁদ দেখার পর থেকে কোরবানির আগ পর্যন্ত নিজের নখ, চুল, গোঁফ, নাভির নিচের পশম ইত্যাদি কাটা থেকে বিরত থাকা। এটি মুস্তাহাব আমল।
হজরত উম্মে সালমা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা যদি জিলহজ মাসের চাঁদ দেখতে পাও আর তোমাদের কেউ কোরবানি করার ইচ্ছা করে, তবে সে যেন স্বীয় চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকে। ’ (মুসলিম, হাদিস : ১৯৭৭)
যারা কোরবানি করতে সক্ষম নয় তারাও এই আমল পালন করতে পারে। অর্থাৎ নিজের চুল, নখ, গোঁফ ইত্যাদি কাটা থেকে বিরত থাকবে। কেননা কোনো অসচ্ছল লোক যদি এ দিনগুলোতে চুল, নখ, গোঁফ ইত্যাদি না কেটে ঈদের দিন কাটে, তবে তাদের পূর্ণ কোরবানির সওয়াব দেওয়া হবে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, আমি কোরবানির দিন সম্পর্কে আদিষ্ট হয়েছি (অর্থাৎ এই দিনে কোরবানি করার আদেশ করা হয়েছে। ) আল্লাহ তাআলা তা এ উম্মতের জন্য ঈদ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। এক ব্যক্তি আরজ করল, হে আল্লাহর রাসুল, যদি আমার কাছে শুধু একটি মানিহা থাকে অর্থাৎ যা শুধু দুধপানের জন্য দেওয়া হয়েছে? আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, না; বরং সেদিন তুমি তোমার চুল কাটবে, নখ কাটবে, গোঁফ ও নাভির নিচের পশম পরিষ্কার করবে। এটিই আল্লাহর কাছে তোমার পূর্ণ কোরবানি বলে গণ্য হবে। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৬৫৭৫)
উক্ত হাদিসে রাসুল (সা.) কোরবানি করতে অসক্ষম ব্যক্তিরাও যেন সচ্ছল মুসলমানদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ও খুশি উদ্যাপনে অংশীদার হতে পারে, সেই রাস্তা বাতলে দিয়েছেন। তারা এই ছোট্ট আমলটির মাধ্যমেও পরিপূর্ণ সওয়াবের অধিকারী হবে। অনুরূপভাবে হাজিদের সাদৃশ্য অবলম্বনকারী হবে। মহান আল্লাহ এতটাই মহান যে তিনি তাঁর কোনো বান্দাকেই নৈরাশ করেননি। সব প্রশংসা একমাত্র তাঁরই।