
নিউজ ডেস্ক: পটিয়া মাদরাসায় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার নিন্দা, দোষীদের তদন্তপূর্বক শাস্তি এবং মজলিসে শূরার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে ইত্তেহাদ।

আজ ২ ডিসেম্বর (শনিবার) সকাল ১০ ঘটিকায় চট্টগ্রাম মিয়াখান নগরস্থ জামিয়া মোজাহেরুল উলুমে আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস (বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড)-এর সাধারণ পরিষদ, মজলিসে শূরা ও পরীক্ষা কমিটির এক জরুরি যৌথ-অধিবেশন বোর্ডের সম্মানিত সভাপতি, জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার পৃষ্ঠপোষক ও মজলিসে শূরার সভাপতি আল্লামা সুলতান যওক নদভীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। অধিবেশনে বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন মাদরাসার তিন শতাধিক প্রতিনিধি, বিভিন্ন স্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা, মজলিসে শূরার সদস্য ও দেশের শীর্ষ ওলামায়ে কেরাম উপস্থিত থেকে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন।
সভাপতির বক্তব্যে আল্লামা সুলতান যওক নদভী বলেন, আমি পটিয়ার সন্তান, মুরব্বিদের সোহবত ও সান্নিধ্যে পেয়েছি। আল-হামদু লিল্লাহ আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি। মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামযা ইত্তেহাদের মহাসচিব ও পটিয়া মাদরাসার বৈধ মুহতামিম। সভায় উপস্থিত প্রতিনিধিদেরকে উদ্দেশে করে বলেন, ২৮ অক্টোবর পটিয়া মাদরাসায় সংঘটিত হামলার ঘটনা নজিরবিহীন, এ ঘটনা পটিয়া মাদরাসার ইতিহাস-ঐতিহ্যকে ভূলণ্ঠিত করেছে। মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামযার বিরুদ্ধে অন্যায় হয়েছে, এর বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণে তাঁকে সহযোগিতা করুন এবং পটিয়া মাদরাসার হেফাজতে সকলে কাজ করুন।
পটিয়া মাদসার মজলিসে শূরার সদস্য ও সুলতান আহমদ নানুপুরী (রহ.)-এর সাহেবজাদা আল্লামা এমদাদুল্লাহ নানুপুরী বলেন, আমার আব্বাজান বলেছেন, মাদরাসার জিম্মাদারি থেকে কাউকে বহিষ্কারের জন্য নৈতিক স্খলন, আর্থিক কেলেঙ্কারি ও যোগ্যতার অভাব থাকতে হবে। কিন্তু মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামযার অপরাধ কী? আমি এখানে মাওলানা ওবায়দুল্লাহর পক্ষে কথা বলতে আসিনি, আমি একজন মুজলুমের পক্ষে এসেছি। দোষীদের শাস্তি না হলে কওমি মাদরাসাসমূহ ধ্বংস হয়ে যাবে। তিনি বলেন, পটিয়ার ঘটনা এখতেলাফ নয়, এটা হিংসুকদের হিংসা; এটা মেনে নেওয়া যায় না।
বোর্ডের সহ-সভাপতি ও জামিয়া ইসলামিয়া টেকনাফের মুহতামিম আল্লামা কেফায়েতুল্লাহ শফিক পটিয়া মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা কুতুবে জামান আল্লামা মুফতি আজিজুল হক (রহ.)-এর আমলে অনুমোদিত বোর্ডের একটি উর্দু সংবিধানের পুরোনো কপি উঁচিয়ে বলেন, ইত্তেহাদের কেন্দ্রীয় দফতর হবে পটিয়ায়, কিন্তু মজলিসে শূরা প্রয়োজন মনে করলে কেন্দ্রীয় দফতর পটিয়া মাদরাসার বাইরেও হস্তান্তর করতে পারবে।
জামিয়া সিলোনিয়া ফেনীর নায়েবে মুহতামিম আল্লামা মুফতি আহমদুল্লাহ কাসেমী বলেন, কওমি মাদরাসাসমূহ ধ্বংসের ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। একটা দুষ্কৃতিকারী মহল উস্তাদদের সাথে বেয়াদবি নিজেদেরকে বিপ্লবী বলে জাহের করছে। এদেরকে এখনই রুখে না দিলে কওমি মাদরাসাসমূহ ধ্বংস হয়ে যাবে। পটিয়ার ঘটনায় উস্তাদদের সাথে বেয়াদবির পথ খুলে দেওয়া হয়েছে, যারা এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় ইন্দন যুগিয়েছে তারা যত বড়ো ব্যক্তিই হোক না কেন তাদেরকেও শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
ইত্তেহাদের জরুরি এ অধিবেশনে এক প্রস্তাবে সর্বসম্মতিক্রমে ২৮শে অক্টোবর পটিয়া মাদরাসায় সন্ত্রাসী হামলা ও মহাপরিচালককে জোরপূর্বক পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নেওয়ার ঘটনার নিন্দা জ্ঞাপন করা হয় এবং উক্ত ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানানো হয়। প্রস্তাবে ৩রা নভেম্বর ২০২৩ পটিয়াস্থ ডাক বাংলোয় অনুষ্ঠিত পটিয়া মাদরাসার মজলিসে শূরার সিদ্ধান্তসমূহ অবিলম্বে বাস্তবায়নে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অধিবেশনে সিদ্ধান্ত হয় যে, চট্টগ্রাম শহরে অস্থায়ী কার্যালয় থেকে ইত্তেহাদের যাবতীয় কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে ও যথানিয়মে বোর্ড পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হবে এবং অস্থায়ী কার্যালয় নির্ধারণ ও পরীক্ষা গ্রহণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে কার্যনির্বাহী পরিষদকে ক্ষমতা দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম শহরে নিজস্ব জমিতে ইত্তেহাদের কেন্দ্রীয় দফতর প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব পাশ হয় এবং তাৎক্ষণিকভাবে সদস্য মাদরাসাসমূহের প্রতিনিধি ও শুভানুধ্যায়ীদের উদ্যোগে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার একটি তহবিলও গঠিত হয়। অন্য এক প্রস্তাবে বোর্ডের নীতি-শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে সিনিয়র সহ-সভাপতির পদ থেকে মুফতি হাফেজ আহমদুল্লাহ সাহেবকে অব্যহতি দিয়ে তদস্থলে আল্লামা ফুরকানুল্লাহ খলীলকে মনোনীত করা হয়।
বোর্ডের মহাসচিব আল্লামা ওবায়দুল্লাহ হামযার স্বাগত বক্তব্যের শুরু হওয়া অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন জামিয়া মোজাহের উলুমের মহাপরিচালক আল্লামা লোকমান হাকিম, ইত্তেহাদের সহ-সভাপতি ও জামিয়া পটিয়ার মজলিসে শূরার সদস্য আল্লামা মুফতি কেফায়েতুল্লাহ শফীক, আল্লামা ফরিদ উদ্দিন আল-মোবারক, ফেনী সিলোনিয়া মাদরাসার মুহতামিম আল্লামা সাইফুদ্দীন ও জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার মজলিসে শূরার সদস্য আল্লামা এমদাদুল্লাহ নানুপুরী ও আল্লামা হাসান মুরাদাবাদী প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন ইত্তেহাদের সহ-সভাপতি আল্লামা ফুরকান উল্লাহ খলীল, আল্লামা হাফেজ সালাহুল ইসলাম, আল্লামা মুসলিম উদ্দীন, আল্লামা আফসার উদ্দীন চৌধুরী, আল্লামা মুফতি এনামুল হক, মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, মাওলানা মুহসিন শরীফ ও মাওলানা মোহাম্মদ আলী প্রমুখ।