
নিউজ ডেস্ক : রাঙ্গুনিয়া পদুয়ায় আমেনা খাতুন (২৮) নামে এক গৃহবধূর রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারী) সকাল ১০ ঘটিকার দিকে গৃহবধূর স্বামীর বোনের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
শ্বশুর বাড়ির পরিবারের পক্ষ থেকে গৃহবধূ আমেনা খাতুন স্ট্রোক করে মারা গেছে বলে জানানো হলেও আমেনা খাতুনের পরিবারের দাবি তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছে।
এই ঘটনায় নিহতের পিতা থানায় হত্যা মামলা দিলে পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করে শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে।
নিহত আমেনা খাতুন উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড দুধ পুকুরিয়া পূর্ব-পাহাড় আব্দুল গফুর বাদশার বাড়ি এলাকার আবদুল গফুর ড্রাইভারের স্ত্রী৷ এই ঘটনায় স্বামী পলাতক রয়েছেন বলে জানায় পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার সকাল দশটার দিকে শ্বশুর বাড়ির থেকে পরিবারের সবাইকে চা নাস্তা দিয়ে স্বামীর বোনের বাড়ির দিকে রওয়ানা হয়,পরে স্থানীয়রা স্বামীর বোনের বাড়ির কক্ষে তার লাশ দেখতে পেয়ে দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে তার লাশ উদ্ধার করে।
এই ঘটনায় নিহত গৃহবধূর পিতা মো. হাছি মিয়া বাদী হয়ে একইদিন রাতে দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে। এতে নিহতের স্বামী আবদুল গফুর ড্রাইভারকে প্রধান আসামী করে ৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে স্বামীর দ্বিতীয় বউয়ের বড় বোন একই এলাকার মো. মোনাফের স্ত্রী আমেনা বেগমকে (৩০) গ্রেফতার করে।
নিহতের স্বজনরা জানান, ২০১৫ সালে ভিকটিমের সাথে একই এলাকার আবদুল গফুরের বিয়ে হয়। ১০ বছর যাবৎ তাদের সংসার সুখেই চলছিল,তাদের ৪ মাস বয়সী এক মেয়ে, ৪ ও ৭ বছর বয়সী দুই ছেলে সন্তান রয়েছে।
গত ৫ মাস আগে স্বামী আবদুল গফুর ২য় বিবাহ করে, বিষয়টি নিয়ে পরিবারের মধ্যে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে দ্বিতীয় বিবাহ কাল হয়ে দাঁড়ায় ভিকটিম ও তার পরিবার। ভিকটিম গৃহবধু আমেনাকে এরই ধারাবাহিকতায় পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ করে ভিকটিমের পরিবার এবং তার পরিবার এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’
ভিকটিমের শ্বাশুরী জানান, ২০১৫ সালে ভিকটিমের আমার ছেলে আবদুল গফুরের সাথে বিয়ে হয়,১০ বছর যাবৎ তাদের সংসার সুখেই চলছিল,কোন দিন ঝগড়া করেতও আমরা দেখিনি,ভিকটেমের স্বামী তাঁর স্ত্রীকে খুব আদর যত্ন করত,তারা আমেনা খাতুনের বাপের বাড়ি এলাকায় বাসা বাড়া নিয়ে থাকত,মাঝে মধ্যে সে তার স্ত্রীকে নিয়ে বেড়াতে আসত। কিছুদিন আগে আমার ছেলে দ্বিতীয় আরেকটা বিবাহ করে চট্টগ্রাম শহরের বাসায় রাখে,২য় বিবাহের কথা ভিকটিমের পরিবার জানতে পারলে তারা আমার ছেলে আব্দুল গফুরকে বাসা থেকে বের করে দেয়,তখন সে এলাকায় চলে আসে, পরে তার স্ত্রী আমেনা খাতুনকেও ঘরে নিয়ে আসে। ঘরে আসার পর তাদের মধ্যে কোন ঝগড়া হতে দেখিনি তবে ভিকটিম আমেনার খাতুনের সাথে মৃত্যুর আগের দিন রাতে তার পরিবারের সাথে মোবাইল ফোনে কথা-কাটাকাটি হয়, ভিকটিমের স্বামীর ট্রাক গাড়ির মালিকানা বিষয়ে, রাতে তারা ঘুমিয়ে যায়,সকালে বউমা সবাইকে চা-নাস্তা দিয়ে আমার মেয়ের বাড়ির দিকে তার ছোট মেয়েসহ হাটতে চলে যায়, কিছুক্ষণ পর খবর পেলাম আমার মেয়ের বাড়ির কক্ষে তার লাশ পড়ে আছে,সেই ঘরটি নতুন করা হয়েছে,ঐ ঘরে এখনো কেউ বসবাস করেনা।
আমার মনে হয় আমার পুত্রবধু আমেনা খাতুন স্ট্রোক করে মারা গেছে। পরে লোকজন থানায় খবর দিলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার এসআই ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. সুজাউদ্দৌলা বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে বিছানায় শোয়া অবস্থায় পাওয়া গেছে। কোন আলামত পাওয়া যায়নি। তবে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
রিপোর্ট এলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। তবে থানায় একটি হত্যা মামলা নেয়া হয়েছে। একজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। বাকীদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।